
ঐতিহাসিক মেহেরপুর জেলা
দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের সবচেয়ে ছোট একটি জেলা হচ্ছে মেহেরপুর। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জেলা হিসেবে মেহেরপুর সর্বত্রই পরিচিত। কিন্তু সবচেয়ে ছোট জেলা হলেও এই জেলায় রয়েছে প্রায় দুই হাজার বছরের প্রাচীন যুগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই জেলার ইতিহাস খুবই গৌরবজ্জ্বল। এর মূল কারণ হলো ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অভ্যুদয়ের ঘটনায় সুতিকাগার এর ভূমিকা পালন করছে মেহেরপুর জেলা। বাংলাদেশ এর জনপদ গুলোর মধ্যে অন্যতম স্মৃতি বিজড়িত হয়ে আছে মেহেরপুরে মুজিবনগর।
ছোট জেলা হওয়া সত্ত্বেও, মেহেরপুর জেলাটি প্রাচীন আমল থেকে শুরু করে ভিন্ন সময়ে অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সব স্থাপনা। যা মেহেরপুর জেলাকে সবদিক দিয়ে করেছে সমৃদ্ধ শক্তিশালী ও ঐতিহ্য বহনকারী।
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থাপনা ও তারই উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কথা আজ আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাহলে চলুন এক নজরে দেখে আসা যাক আমাদের ছোট জেলা মেহেরপুরের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা সম্পর্কে :
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মেহেরপুরের সেই সময়ের বৈদ্যনাথ তলায় হলো বর্তমানে মুজিবনগর। সর্বপ্রথম এই স্থানে বাংলাদেশের প্রথম সরকার ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন, সাথে পাঠ করা হয় প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু ত্বরণ, মসজিদ, হেলিপ্যাড, শেখ হাসিনা মঞ্চ, অডিটোরিয়াম, প্রশাসনিক ভবন, শিশু পল্লী, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, স্বাধীনতা মাঠ, বিশ্রামাগার, পোস্ট অফিস, পর্যটন মোটেল, ডরমেটরি ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র। আর এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য স্থাপনার একটি হল সূর্যের প্রকৃতিককে প্রতীক করে ২৩ টি কংক্রিটের ত্রিকোণ দেওয়ালের সমন্বয় স্থাপন করা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ।
আমঝুপি নীলকুঠি: মেহেরপুরে জড়িয়ে রয়েছে দীর্ঘ প্রাচীন ইতিহাস নীল চাষ ও নীলকরদের। ১৮১৫ সাল অথবা আরো কিছুকাল পরে আমঝুপি নীলকুঠি স্থাপিত হয়েছে। জন ফিলিপস কর্তৃক 1935 সালে প্রকাশিত নীল চাষ বিষয় গ্রন্থের বলা হয়েছে যে, লুই বান্য নামক ফরাসি ব্যক্তি প্রথম নীল চাষ করেছিলেন বাংলাদেশে।
ভবানন্দপুর মন্দির: এটি একটি হিন্দু মন্দির। মেহেরপুর জেলার প্রত্ন নিদর্শন গুলোর অন্যতম হলো এই প্রাচীন মন্দিরটি , যা সদর থানার ভবানন্দপুর গ্রামে অবস্থিত।
সাহারবাটি, নীলকুঠি ভাটপাড়া: এই স্থানটিতে রয়েছে কাজলা নদী। ধ্বংসপ্রায় নীলকুঠি টি আনুমানিক ১৮৫৯ সালের এবং এটি নির্মিত হয় ইট, চুন, আর শুড়কি দ্বারা। এই কুঠিটির ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাজলা নদীটি।
স্বামী নিগমানন্দ আশ্রম: স্বামী নিগমানন্দ আশ্রম হচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান মেহেরপুর জেলার। রাজা গোয়ালা চৌধুরী প্রায় ১৮ শতকের দিকে এই আটচালা শিব মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত করেন মেহেরপুর শহরে।
শেখ ফরিদের দরগাহ: বাগোয়ান হলো সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রশিদ্ধ গ্রাম মেহেরপুর জেলার মধ্যে। বিশ্বের নামিদামি লেখক এর গ্রন্থেও এই দরগাহের কথা উঠে এসেছে। ডক্টর. ইরফান হাবিবের লেখায়, ভারতচন্দ্র রায় গোনাকর এর "ক্ষিতিশ বংশাবলী চরিতাং " মঙ্গল কাব্যগ্রন্থে এই গ্রামের কথা উল্লেখ আছে।
মেহেরপুর পৌর কবরস্থান: এই পৌর গোরস্থান অরক্ষিত ছিল। মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা সড়ক সংলগ্ন স্থানে ১৯৯৩ সালে এই পৌর গোরস্থান পৌর জনাব মোঃ মোতাছিন বিল্লাহ মতুর নির্দেশে বা পরিচালনায় সুদর্শন প্রাচীন নির্মাণসহ প্রাচীরের গায়ে টাইলসহ ও পাথরের উপর আরবিও হাদিসের বাণী লিখে সুসজ্জিত করা হয়।
মেহেরপুর শহীদ স্মৃতিসৌধ: ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে মেহেরপুর পৌর গোরস্থানের পাশে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। বীর শহীদদের স্মরণে মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এখানে সকলেই সমাগম হয় মাল্যদান করতে।
সবশেষে বাংলাদেশের ইতিহাস এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে মেহেরপুর জেলা। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, এটি একটি অতি প্রাচীন লোকাল বাস তাছাড়া এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও অবস্থান বিবেচনায় জানা যায় যে এটা একটি বেশ প্রাচীন জনপদ গুলোর মধ্যে একটি। জানা যায় যে, রাজা গোয়ালা চৌধুরী খেতাবপ্রাপ্ত রাজার পুত্র মেহেরপুর শহরের মূল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত।
এস আর