
হঠাৎ তেতেছে পেঁয়াজের বাজার। গত তিন-চার দিনে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম। তবে ঈদের আগে উত্তাপ ছড়ানো মুরগির বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। সবজির বাজারও গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমতির দিকে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ও তেজগাঁওয়ের কলোনি বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের বাজারের এই চিত্র দেখা গেছে।
এবার মৌসুমে বেশ কম দর ছিল পেঁয়াজের। ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের কেজি সর্বনিম্ন ২৫ টাকায় নেমেছিল। রোজার ঈদের আগে, অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও কেজি বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঈদের পর বাড়তে থাকে দাম। গত সপ্তাহে সবচেয়ে ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি উঠেছে ৫০ টাকায়।
তবে গতকাল দর আরও বেড়ে ৬০ টাকা ছুঁয়েছে। যদিও পাড়া-মহল্লার দোকানদারদের কেউ কেউ এর চেয়েও কিছুটা বেশি দরে বিক্রি করছেন। তবে পাইকারি বাজার থেকে একসঙ্গে পাঁচ কেজি কেনা যাচ্ছে ২৭০ থেকে ২৭৫ টাকায়। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি দর পড়ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আকাশ মিয়া বলেন, ঈদের পর থেকে দুই-তিন টাকা করে বাড়ছে দাম। পাবনার মোকামে দাম বাড়ার কারণে ঢাকায়ও দর বাড়ছে।
ঢাকার বাইরেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। হিলি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি স্থলবন্দর এলাকায় সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, মৌসুমের শেষের দিকে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দাম বাড়তির দিকে। বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে পেঁয়াজের আইপি (আমদানির অনুমতি) বন্ধ রয়েছে। আসন্ন কোরবানি ঈদে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে পড়বে। তাই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়া দরকার।
এদিকে, রসুনের দর কিছুটা কমতির দিকে। সপ্তাহ দুয়েক আগে আমদানি করা রসুনের কেজি ২০০ থেকে ২২০ এবং দেশি রসুনের কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল আমদানি করা রসুনের কেজি ১৮০ থেকে ২১০ এবং দেশি রসুনের ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা রসুন কেজিতে ১০ থেকে ২০ এবং দেশি রসুন কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে।
এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাড়তে থাকে মাংসের দাম। তখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। একইভাবে সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায়। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৭৫ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
একইভাবে দর কমেছে গরুর মাংসের। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়। দর কমে গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজি ৭৫০ টাকা দরে। মুরগির দর কমার বিষয়ে পশ্চিম নাখালপাড়ার মুরগি বিক্রেতা সুজন মিয়া বলেন, খামার পর্যায়ে দর কিছুটা কম। সেজন্য খুচরা বাজারেও কমেছে।
ডিমের দরে তেমন হেরফের নেই। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। মাসখানেক ধরেই এই দামের আশপাশে রয়েছে ডিমের দর। মাছের বাজারেও খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায়নি।
দাম বাড়ানোর আশায় কয়েক দিন ধরে বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিলেন আমদানিকারকরা। গত মঙ্গলবার লিটারে ১৪ টাকা দাম বাড়ানোর পর বাজারে বোতলের সরবরাহ বেড়েছে। বিশেষ করে ফ্রেশ ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেল দেখা গেছে বেশির ভাগ দোকানে।
ঈদের পর সরবরাহ কম থাকায় কিছুটা বেড়েছিল সবজির দাম। তবে গতকাল সবজির বাজার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পটোল, উচ্ছে, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ও শসার কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গাজর ও টমেটোর কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে। এ ছাড়া বেগুনের কেজি কেনা গেছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। তবে বরবটির কেজি কিনতে ক্রেতাকে ১০০ বা এর চেয়ে বেশি টাকা গুনতে হয়েছে। কাঁচামরিচের দরও বেশ কম। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। আলুর দর এখনও কম। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকায়।