
আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেল নিয়ে সুখবর দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, পাইপলাইনে বেশ কিছু ভোজ্যতেল ভর্তি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করার অপেক্ষায় আছে। এই তেল দ্রুতই স্থানীয় সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাইপলাইনে থাকা তেলের পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টন। সাবির্কভাবে সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে, তেল যেন ভোক্তারা নির্ধারিত মূল্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে পান তার জন্য উৎপাদনকারীরাও প্রয়োজনীয় তদারকি করবে।
ব্যবসায়ীদের উপস্থাপন করা তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। তারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুদ করে থাকতে পারেন; কেউ আবার অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেলে পরিণত করে তা বিক্রি করতে পারেন। অন্যদিকে, পার্শ্ববর্তী দেশে মূল্য অধিক হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হওয়ার আশঙ্কাও করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে রমজানে ভোজ্যতেলের বাজারে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ সভায় এসব তথ্য ওঠে আসে। সভায় কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান সভাপতিত্ব করেন। এতে বণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আবদুর রহিম খান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে আরও অংশ নেন দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
সভায় বর্তমানে বাজারে বোতলজাতকৃত সয়াবিন তেলের ঘাটতি রয়েছি কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়। উৎপাদনকারীরা জানান, আগের বছরগুলোর তুলনায় তারা সাম্প্রতিক মাসগুলো বাজারে সরবরাহ বাড়িয়েছেন।
সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি (উপদেষ্টা) অমিতাব চক্রবর্তী জানান, সিটি গ্রুপ গত জানুয়ারিতে মোট তেল সরবরাহ করেছেন প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ টন। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ হাজার টন বোতলজাত। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের একই মাসে বোতলে তারা সরবরাহ করেন ১৪ হাজার ২৬২ টন।
মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি জিএম তসলিম শাহরিয়ার জানান, গত জানুয়ারিতে মোট ৪৭ হাজার ৬৬৮ টন সরবরাহ করেন। এর মধ্যে ১৫ হাজার টন বোতলজাত। আগের বছরে মোট সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার টনের মধ্যে ১২ হাজার টন বোতলজাত।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ১১ হাজার ৮১০ টন বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করেছেন। যা গতবছরের একই সময়ে ছিল ৯ হাজার ৫০০ টন।
অন্যান্য উৎপাদনকারীরা জানান, তারাও আগের মাসগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে সরবরাহ বৃদ্ধি করেছেন।
সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়
১. স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই। যা হয়েছে তা কৃত্রিম এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে সৃষ্ট। কাস্টমস থেকে পাওয়া তথ্য অনুমতে, গত দুই মাসে ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। একইসঙ্গে, এলসিও বেড়েছে একই হারে।
অন্যদিকে, বিভিন্ন উপাত্ত থেকে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য স্থিতিশীল। সার্বিকভাবে, বর্তমানের আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানি পরিস্থিতি স্থানীয় বাজারেও এর সরবরাহ ও দামের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দেয়। তাই ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ রক্ষায় উৎপাদন ও বিপণনের সকল পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
২. প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কেউ কেউ অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করে থাকেন। উৎপাদক বা অন্যান্য কোনো পর্যায়ে এ ধরণের শর্তযুক্ত বিক্রয় বা বাজারজাত করা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরণের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৩. ভোজ্যতেলের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে কিনা তা সীমান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখবে এবং তা প্রতিরোধে আইনি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৪.উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়োগকৃত পরিবেশকদের সরবরাহ করা ভোজ্যতেল যেন ভোক্তারা নির্ধারিত মূল্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে পায় তার জন্য প্রয়োজনীয় তদারকি করবে।