ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠা আলুর বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। দীর্ঘদিন পর পণ্যটির দাম নেমেছে ২০-২৫ টাকায়। সরবরাহ বাড়ায় কমতির দিকে পেঁয়াজের দামও। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। কমেছে ডিম-মুরগির ও ইলিশ মাছের দামও।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ানবাজার, কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং নয়াবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ২০-২৫ টাকায় নেমেছে। পাইকারি পর্যায়ে যা কেজিপ্রতি ১৮-২০ টাকা ও আড়তে বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকায়। আর পুরান আলু বাজারে খুব একটা নেই বললেই চলে, যা রয়েছে সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে।
এক সময় বাজারে ভোক্তার ঘাম ছোটানো পেঁয়াজের বাজারেও নেমেছে স্বস্তি। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমছে। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মোসলেম বলেন, মুড়িকাটায় বাজার ভরপুর। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে বিদেশি পেঁয়াজেরও। এতে দাম কমছে।
বর্তমানে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪২-৪৪ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম কমার তথ্য মিলেছে টিসিবির পরিসংখ্যানেও। তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৪৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২২ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে।
কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ইলিশের দামেও
কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে অস্থির হয়ে ওঠা ইলিশের বাজারে। কেজিপ্রতি ২০০ টাকার বেশি কমেছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২৮০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০-১৯০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৩০০-১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত।
ডিম- মাংসের দামও নাগালে
বাজারে কমেছে মুরগি ও ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০-১৩৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩৫-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কমে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৩০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।
তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
তবে অস্থিরতা কাটেনি চালের বাজারে। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম