সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম যে মাত্রায় বেড়েছে সিগারেটের দাম সে মাত্রায় বাড়ানো হয়নি। বাজেটে সিগারেটের দাম অল্প অল্প করে বাড়ানোর ফলে সিগারেট বরং আরও সহজলভ্য হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাই সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে ওই বর্ধিত দামের ওপর বেশি করে করারোপ করা দরকার। তাহলে একদিকে যেমন সিগারেটের ব্যবহার কমানো যাবে, অন্য দিকে তেমনি সিগারেট বিক্রি থেকে আসা রাজস্বও বাড়ানো সম্ভব হবে।
(মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫) ঢাকায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ বিষয়ক সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন আলোচকবৃন্দ। বিআইডএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. এস. এম. জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে এই সেমিনারে মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের সিনিয়র প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জাহিদ রহমান।
সেমিনারে প্রেক্ষাপট উপস্থাপনায় উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন যে, বিগত তিনটি অর্থবছরে সয়াবিন তেল, ফার্মের মুরগি, মসুর ডাল এবং চিনির মতো নিত্যপণ্যগুলোর দাম বেড়েছে ২৬ থেকে ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ সিগারেটের দাম বেড়েছে ৭.২৫ শতাংশ। ফলে এই তিন বছরে বার্ষিক সিগারেট বিক্রির পরিমাণ ৪৭৬ কোটি শলাকা বেড়েছে। ড. জুলফিকার আলী আগামী অর্থবছরে সিগারেটের স্তরের সংখ্যা চারটি থেকে তিনটিতে নামিয়ে এনে সকল স্তরের ওপর ৭০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপের আহ্বান জানান। পাশাপাশি সিগারেটের একটি শলাকার দাম অন্তত ১০ টাকা নির্ধারণের পরামর্শ দেন তিনি (বর্তমানে সবচেয়ে সস্তা সিগারেটের একেকটি শলাকার দাম ৬ টাকা)। আগামী অর্থবছরে নাগরিক সমাজের এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করা গেলে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৫.১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৩ শতাংশের নিচে নামানোর পাশাপাশি সিগারেট বিক্রি থেকে আসা রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি করা সম্ভব বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
বাড়তি রাজস্ব আহরণ নয়, বরং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বিশেষ করে আগামী প্রজন্মকে সিগারেট ব্যবহার থেকে বিরত রাখার জন্যই সিগারেটের দাম বাড়ানো ও বর্ধিত দামের ওপর বেশি হারে করারোপ দরকার বলে মনে করেন ফরিদা আখতার। তিনি আরও বলেন যে চলতি অর্থবছরের শুরুতে জাতীয় বাজেটে সিগারেটের কর প্রস্তাবে তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলোর পরামর্শ পুরোপুরি প্রতিফলিত না হলেও, অর্থবছরের মাঝখানে এসে নতুন করে সিগারেটের দাম ও কর বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। তবে অর্থবছরের শুরুতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হলে আরও বেশি সুফল পাওয়া যেত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সিগারেট ব্যবহার রোধে কার্যকর করারোপের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন উমামা ফাতেমা।