
একসময় খরস্রোতা সুতাং নদীতে জাল ফেললেই মিলত হরেক রকমের মাছ। বাজারে সুতাং নদীর মাছ শুনলেই ক্রেতাদের ভিড় জমে যেত। নদীপারের মানুষের জীবন-জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এই নদী। আর নদীর পানি দিয়ে বিস্তীর্ণ হাওরে আবাদ হতো বোরো ফসল। কিন্তু এখন আর সেই ঐতিহ্য নেই। কালো রঙের পানি এখন জীবাণুতে ভরপুর। ভয়াবহ শিল্পদূষণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়; নদীর পানি ও মাছে পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সুতাং নদীর পানি ও মাছের ওপর একটি গবেষণা করে এ তথ্য পান। এক দশক ধরে শিল্পদূষণের শিকার এই নদীদূষণের মাত্রা নির্ধারণের জন্য গবেষকরা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে পানি, মাছ ও পলির নমুনা সংগ্রহ করেন।
গবেষণা প্রকল্পের প্রধান ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. শাকির আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছি যে পানি ও মাছের নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। বর্তমানে ভারী ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য আরো পরীক্ষা চলছে।
গবেষকদলের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুন বলেন, ‘এরই মধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে পানি ও মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া শিল্পবর্জ্যের ফলে নদীর পানির ভৌত রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে নদীর নিম্ন প্রবাহে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, নদীর দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত কম, যা স্বাদু পানির মাছের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক নিচে।
নমুনা সংগ্রহের সময় গবেষকরা দেখতে পান যে নদীর নিম্ন প্রবাহে মাছের সংখ্যা অত্যন্ত কম। বিশেষ করে শৈলজোড়া খালের সংযোগস্থলের আশপাশের এলাকাটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছিল, যেখানে শিল্পবর্জ্য নদীতে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে মাধবপুর থেকে অলিপুর এলাকা পর্যন্ত গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্যই মূলত দূষিত হচ্ছে এই নদীর পানি।
সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, ‘দেশের সব থেকে ভয়াবহ দূষণের নদী হিসেবে সুতাং নদী পরিচিতি পেয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে।’
প্রসঙ্গত, সুতাং নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম