শনিবার,

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,

১৯ মাঘ ১৪৩১

শনিবার,

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,

১৯ মাঘ ১৪৩১

Radio Today News

সমুদ্রতীরে কচ্ছপের মৃত্যু মিছিল রেখে গেল অনেক প্রশ্ন

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Google News
সমুদ্রতীরে কচ্ছপের মৃত্যু মিছিল রেখে গেল অনেক প্রশ্ন

কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে উদ্ধার হয়েছে প্রায় শতাধিক মৃত কচ্ছপ। দিন যত বাড়ছে দীর্ঘ হচ্ছে সেই সারি।  জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাণ-প্রকৃতি বদল ও মানুষের অসচেতনতাসহ নানা কারণে এ পরিস্তিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে প্রশ্ন উঠেছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি কি কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে? অথবা সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা নতুন অবকাঠামোর ও গতি প্রকৃতির কারণেই এই পরিবর্তন কি-না। এসব প্রশ্নের পাশাপাশি সমুদ্র উপকূলে জীববৈচিত্র্য বদলের বিষয়টি জোরালো আলোচনায় এসেছে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক সপ্তাহে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় কচ্ছপের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে খবর দেওয়া হয় বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিওআরআই-বোরি) গবেষকদের। খবর পেয়ে সৈকতের টেকনাফ, উখিয়া, রামুর হিমছড়ি, কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক বেলাভূমিতীর থেকে বেশ কিছু মৃত কাছিম উদ্ধার করা হয়।

সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সোনাদিয়া, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে অন্তত ২৯টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গিয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে ৩টি মৃত ডলফিনও ভেসে এসেছিল। অন্যদিকে চলতি বছরের ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা চারদিন সৈকতের টেকনাফের সাবরাং জিরো পয়েন্ট থেকে উখিয়া উপজেলার রূপপতি, সোনার পাড়া, পেঁচারদ্বীপ ও হিমছড়ি পর্যন্ত স্থান থেকে ৭০টি মৃত কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়। এরপর একদিন বিরতির দিয়ে ২৯ জানুয়ারি শেষ দফার অনুসন্ধানে নাজিরারটেক থেকে পেঁচারদ্বীপ-মংলাপাড়া পর্যন্ত স্থান থেকে আরও ১৪টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া যায়। সংস্থাটির তালিকা অনুসারে সম্প্রতি কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে শতাধিক মৃত কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়।

মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম। এ সময় মা কচ্ছপ উপকূলে ডিম পাড়তে আসে। তখন অনেক কচ্ছপ উপকূলে বসানো জেলেদের জালে আটকে এবং সমুদ্রে চলাচলকারী নৌযানের ধাক্কায় মারা যায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সম্প্রতি সময়ে একের পর এক মৃত কচ্ছপ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত চলছে। 

বোরির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ শিমুল ভূঁইয়া বলেন, বোরির ৫ সদস্যের গবেষণা দল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সার্ভে সম্পন্ন করে। উদ্ধার কাছিমের বেশিরভাগ ছিল অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙা সামুদ্রিক কচ্ছপ। অধিকাংশের পেটে ছিল ডিম। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের পর কচ্ছপগুলো বালি চাপা দেয়া হয়েছে। সবগুলো কাছিম সম্প্রতি সময়ে মারাগেছে এমন নয়। দুই মাস আগে মারা গেছে এমন কচ্ছপও রয়েছে। আমরা অনেকগুলোর কঙ্কাল পেয়েছি। গত ২৪ দিনে শতাধিক মৃত কাছিম ভেসে এসেছে। তদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। প্রজনন মৌসুমে এবার এত সংখ্যক কচ্ছপের মৃত্যু ভাবিয়ে তুলেছে গবেষকদের। এভাবে কচ্ছপের মৃত্যু, তাদের প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উই ক্যান কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ওমর ফারুক জয় বলেন, জেলেদের সচেতন করা, ডিম দেওয়ার স্থানটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি এবং সৈকতে কুকুরের বিচরণ রোধ করা জরুরি, তা না হলে কচ্ছপ রক্ষা করা যাবে না।

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলের প্রকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে পুরোনো অনেক গ্রাম। আবার অনেক জায়গায় চর জেগে পাল্টে গেছে নদীর গতিপথ ও উপকূলের তীর। ডিম দিতে তীরে আসার পথে জেলেরা অনেক সময় ঝামেলা মনে করে বাঁশ, কাঠ, লোহা দিয়ে অনেক কচ্ছপ হত্যা করে। পরে মৃত কাছিমগুলো ঢেউয়ের তোড়ে উপকূলে ভেসে আসে।

প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) বলছে, সামুদ্রিক মা কচ্ছপ এখন মহাবিপদে রয়েছে। ১০ বছর আগে ২০০৩ সালে সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের ৫২ পয়েন্টে সামুদ্রিক মা কচ্ছপ ডিম দিতে আসত। সেই সংখ্যা এখন কমে ৩৪-এ দাঁড়িয়েছে। মহেশখালীর সোনাদিয়া থেকে শুরু করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সৈকতের নির্জন এলাকায় এসব কচ্ছপ ডিম দিত। সমুদ্রপাড়ে ডিম দিতে এসে পুনরায় গভীর সাগরে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ এখন ব্যাহত হচ্ছে। ডিম দিতে এসে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে মা কাচ্ছপ।

নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম বলেন, নির্জন সৈকতে কচ্ছপ ডিম দিতে আসে। নানা কারণে ডিম দেয়ার স্থানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি কক্সবাজার সৈকতে আলোকায়ন, সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়া, ডিম ছাড়ার মৌসুমে বিচ ডাইভিং, খেলাধুলা, সৈকতে হাঁটা ইত্যাদি কচ্ছপের ডিম দেয়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ক্রমাগত কমছে কচ্ছপের ডিম দেওয়ার স্থান।

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের