দাবি আদায়ের মিছিলে যেন ক্লান্ত ঢাকার রাজপথ। যার তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে শাহবাগ। তবে সেই গণ্ডি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। যে যেখানে পারছে, সেখানেই বসে পড়ছে, যৌক্তিক-অযৌক্তিক দাবি-দাওয়ার পসরা নিয়ে। যাতে চরমভাবে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। মানুষকে জিম্মি করে পথঘাট বন্ধ করা হলেও তাতে থোড়াই কেয়ার আন্দোলনকারীদের।
অটোরিকশা থেকে অটোপাশ, আনসার থেকে পুলিশ। বিসিএস থেকে বিডিআর কিংবা সাত কলেজ পৃথকীকরণ থেকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়। যে যেভাবে পারছে দাবির পসরা নিয়ে বসছে রোজ। যাকে অনেকেই বলছেন- মামার বাড়ির আবদার।
সাত কলেজের সমাধান শেষে নগরজীবন যখন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদার নিয়ে ফের সরব হলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। মাঝে ক’দিন হালে পানি না পেলেও এবার চলাচলের পথ অবরোধ করে তারা নেমে পড়লেন আমরণ অনশনে। একটা কলেজকে হুট বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার যথার্থতা এবং বাস্তবতা কতখানি তা নিয়ে তাদের ভাবনাইবা না কতখানি?
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের প্রশাসনের অসহযোগীতা এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার কারণে কলেজের গেট থেকে তারা আজ রাজপথে।
ওদিকে আবার গাজীপুরের ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
একদিন আগে রেলের রানিং স্টাফ আর ইবতেদায়ি শিক্ষকরা মোটামুটিভাবে আন্দোলনের ফসল ঘরে নিয়ে গেছেন। তাই চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরাও বসে থাকতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগ আমলে হারানো চাকরি এখনই ফেরত চাইছেন তারা। আর এ জন্য আটকে দিয়েছেন সচিবালয়ের সামনের রাস্তা।
আন্দোলনরত চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা জানান, গত বছরের আগস্টের ১৮ তারিখে আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন তার। তবে পুলিশ সদরদপ্তর তাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। এছাড়া তাদের চাকরি বিভিন্ন কারণে চলে গেছে। যেখানে দ্বিমত করা হয়েছে সেখানেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
১৬ বছর মুখ বুজে থাকা বঞ্চিতদের সব মিছিল যেনো আছড়ে পড়ছে ৬ মাসের ইউনূস সরকারের ওপর। বলা হচ্ছে, এই ৬ মাসে ১৩৬টি আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে অন্তবর্তী সরকারকে।
দাবি-দাওয়া আদায়ের এই মোক্ষম মৌসুমে যেনো কারো তর সইছে না। রাত পোহালে কে কোন দাবি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে তা জানা নেই অসহায় ঢাকাবাসীর।
নিজেদের সবটা ঢেলে দিয়ে একটি অন্তবর্তী সরকারকে দেশের দায়িত্ব দিলো যে আপামর ছাত্রজনতা, সেই তারাই আবার অল্প কয়দিনের সরকারের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে দাবি-দাওয়ার সীমাহীন বোঝা। এই প্যারাডক্স স্বতঃস্ফূর্ত নাকি ঔদাসিন্য, নাকি আরোপিত, সে প্রশ্নের উত্তর মেলবার আগেই হয়তো আগামীকাল দেখা মিলবে নতুন কয়েকটি দাবি-দাওয়ার আন্দোলন।