বৃহস্পতিবার,

৩০ জানুয়ারি ২০২৫,

১৭ মাঘ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

৩০ জানুয়ারি ২০২৫,

১৭ মাঘ ১৪৩১

Radio Today News

দেশের সুয়েটার শিল্পের কিংবদন্তির বিদায়

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১২:৩০, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

Google News
দেশের সুয়েটার শিল্পের কিংবদন্তির বিদায়

আমাদের পরম বন্ধু, সুহৃদ, তৈরি পোশাকশিল্পের আমাদের মধ্যে আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। তিনি একাধারে বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পপতি, তৈরি পোশাকশিল্পের অন্যতম পুরোধা, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং ড্রাগন গ্রুপ, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কো. লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের একটি উল্লেখযোগ্য উপখাত হচ্ছে সুয়েটার শিল্প। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছকে এ উপখাতের জনক বলা হলেও ভুল হবে না । লেখার শুরুতে আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। দেশের সুয়েটার শিল্প আজকের এ অবস্থানে এসেছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছের হাত ধরে। তিনিই প্রথম দেশি ও বিদেশি যৌথ শুরু করেছিলেন চুংহিং সুয়েটার কারখানা। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম সুয়েটার ফ্যাক্টরি ড্রাগন সুয়েটার'ও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

আজকে দেশে যত সুয়েটার ফ্যাক্টরি আছে, সেগুলোতে সুপারভাইজারসহ মধ্যম থেকে জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কেউ না কেউ ড্রাগন সুয়েটারে কাজ করে এসেছেন। ইতিহাসটাও অনেক চমকপ্রদ। বাংলাদেশে তখন সুয়েটার খাতের দক্ষ কোনো কর্মী ছিল না। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ তার প্রতিষ্ঠানে বিদেশি টেকনিশিয়ান এনে দেশের অদক্ষ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এসবের কারণে বর্তমানে সুয়েটার শিল্প আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছকে নিয়ে লিখতে গেলে একটু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করতেই হয়। ঘটনাটি ২০০৩ সালের নভেম্বর মাসের। আমরা সবে ছোট একটি কারখানা চালু করেছি। নতুন কারখানা চালু করতে অর্ডার দরকার। একদিন টেলিফোন করলাম তাকে। তিনি যেতে বললেন ড্রাগন সুয়েটারে । প্রতিষ্ঠানটির ১৬ তলায় গেলাম আমি । আমাকে দেখে তিনি হাত মিলিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তখন আমার কাছে পণ্যের দাম কোনো বিষয় নয়। কারখানা চালুর জন্য অর্ডার বড় বিষয়। সাব-কন্ট্রাক্ট হলেই চলে। ঐ সময়টাতে তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। শুধু আমি নই, অনেকেই তাকে পাশে পেয়েছে।

দেশের সুয়েটার শিল্পের কিংবদন্তির বিদায় এবার আসি তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতৃত্বের বিষয়ে । এই সংগঠনের নেতৃত্বে থাকার সময় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তখন অনেকরাত পর্যন্ত তাকে অফিস করতে দেখেছি । ঐ সময়ে আমাদের রপ্তানির জন্য কাস্টমস থেকে ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) নিতে হতো। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ প্রেসিডেন্ট হওয়ামাত্র কিছুদিন আগে এই কার্যক্রমটি ইউজার্স ডিক্লারেশন (ইউডি) হয়ে বিজিএমইএর হাতে আসে। তখন সংগঠনটির অবকাঠামো যথেষ্ট ছিল না। পোশাকশিল্প মালিকরা যাতে যথাযথ সেবা পায়, সে লক্ষ্যে তিনি রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। কোনো কারখানার মালিক জরুরি ভিত্তিতে ইউডির জন্য বিজিএমইএতে গেলে তিনি কাজ শেষ করা পর্যন্ত কার্যালয়েই অবস্থান করতেন। ব্যক্তি হিসেবে তার এসব গুণ নিয়ে আলোচনা করা যেমন মধুর, তেমনি বেদনাদায়কও বটে। সভাপতি পদে থাকাকালীন তিনি পোশাকশিল্পের বিকাশ ও দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি উত্তরণে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস শিশুশ্রম-সংক্রান্ত কনবিলস মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং স্কুল কার্যক্রম চালু করেছিলেন। তার উদ্যোগে আমরা সবাই মিলে তৈরি পোশাক খাত থেকে শিশুশ্রম নির্মূল করতে পেরেছি।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ যখন বাণিজ্য সংগঠন করতেন, তখন আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ ছিল চমৎকার। আমিও ব্যক্তিগতভাবে বিজিএমইএর নেতৃত্বে সম্পৃক্ত ছিলাম এবং একাধিকবার নির্বাচন করেছি। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ সম্মিলিত পরিষদের নেতা ছিলেন। আমি তার বিপরীতে ফোরামের পক্ষ থেকে নির্বাচন করেছি। নৈতিকতার কারণে আমি তার কাছে কখনো ভোট চাইনি। কিন্তু নির্বাচনকালে তার সঙ্গে আমার একাধিকবার কথা হতো। টেলিফোন করলে তিনি নির্বাচনের বিষয়াদি নিয়ে জানতে চাইতেন। ব্যক্তি হিসেবে সবাইকে আপন করে নেওয়ার একটি সম্মোহনী শক্তি ছিল তার মধ্যে। ঐ সময়ে বিজিএমইএর যেসব নির্বাচন হয়েছে, তা অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে। আমাদের মধ্যে একটি সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল । নির্বাচনে দুপক্ষই ফুলের তোড়া নিয়ে আসত। যে দল বিজয়ী হতো, আমরা তাদের ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মানিত করতাম। তিনি কখনোই তার মতের বিরোধী কাউকে ছোট করে দেখতেন না ।

আজকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু সুয়েটার খাতের পথপ্রদর্শক হিসেবে এবং একজন ভালো উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি আমাদের মনে গেঁথে থাকবেন ।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের