রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও সৈয়দ আমীর আলী হলে রাতের আঁধারে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এসময় হলের দেয়ালে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির লোগো আঁকা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১২ জানুয়ারি) রাতের কোনো এক সময়ে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কারা এমন ন্যক্কারজনক কাজ করেছে তা এখনো জানা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় দাঙ্গা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এই কাজটি করতে পারে।
এদিকে ঘটনার প্রকাশের পরপরই হলে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এ ঘটনাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে দেখছেন। জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বলেন, হলের মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করার পর প্রতিদিনের মতো আমরা কোরআন তেলাওয়াত করতে গিয়ে দেখি দুটি কোরআন শরীফের প্রথম দিকের দুটি সুরা এবং শেষের দিকের দুটির সুরা অবিশ্বাস্যভাবে পুড়িয়ে বুক সেলফে রাখা হয়েছে। দুটি কোরআন শরীফের হার্ড কভারসহ প্রথমে ও শেষের কিছু পৃষ্ঠা পোড়ানো হয় এবং মাঝখানের ৭০ শতাংশ পৃষ্ঠা অক্ষত রয়েছে। এটা নিশ্চিত যে কোরআন শরীফগুলো কোনোভাবে কয়েল বা অন্য কোনো আগুনে পুড়ে নাই। যেকোনো এক গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বড় কোনো উদ্দেশ্য বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে কাজটি করেছে। বিষয়টা অনেক হৃদয়বিদারক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয় মেহেদী সজিব বলেন, জিয়া হল ও আমির আলী হলে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা একইসূত্রে গাঁথা। কোরআন পুড়িয়ে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটানো হয়েছে। মুসলমানদের দুর্বলতা তারা খুব ভালোই জানে। কিন্তু তারা এটা জানে না যে আমাদের কোরআন ও নবীর প্রতি অগাধ ভালোবাসাই সমস্ত শক্তির কারণ। একটি উগ্রবাদী চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোরআন পুড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আমরা তা হতে দেব না ইনশাআল্লাহ। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাই। অনতিবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজে বের করতে হবে।
জানতে চাইলে সৈয়দ আমীর আলী হলে প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুনর রশিদ বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় হল কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারি হলের মুক্তমঞ্চে এক কুরআন শরিফ পোড়ানো হয়েছে। কে বা কারা পুড়েছে তা এখনো জানা যায়নি। কোরআন পোড়ানো তো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, উস্কানি ও ন্যক্কারজনক ঘটনা। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এর জন্য অবশ্যই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
বিজেপির লোগো বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমীর আলী হলে বিজেপির কোনো লোগো আঁকা বা টাঙানোর কথা শোনা যায়নি। আজকে দুপুরে প্রভোস্ট কাউন্সিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে আমাদের বসার কথা আছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমরা একটা শৃঙ্খলা মিটিং এ বসব। এখন পর্যন্ত আমার জানা মতে এ দুই হল ছাড়া অন্য হলে এরকম ঘটনার খবর পাইনি। এ বিষয়ে যা যা করণীয় আমরা করব। একই সাথে আমি আমার ছাত্র-ছাত্রী, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বলছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য যা কিছু করার লাগে আমরা করব। কারণ এটা একটি উস্কানি ও গভীর ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা।’