মঙ্গলবার,

১৪ জানুয়ারি ২০২৫,

১ মাঘ ১৪৩১

মঙ্গলবার,

১৪ জানুয়ারি ২০২৫,

১ মাঘ ১৪৩১

Radio Today News

তিস্তা নদীতে নাব্য সংকট তীব্র, আয় বন্ধ নৌ শ্রমিক-জেলের

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

Google News
তিস্তা নদীতে নাব্য সংকট তীব্র, আয় বন্ধ নৌ শ্রমিক-জেলের

১০ বছর আগে পাঁচটি নৌকা ছিল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর চরের নৌ শ্রমিক মন্টু মিয়ার। এর আয়ে সংসারের খরচ চালাতেন। এখন মাত্র একটি নৌকা আছে তাঁর। সেটিও বছরে চার মাসের মতো চালানো যায়। নদী ভরাট হওয়ায় এখন চলাচল বন্ধ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাঝি-মাল্লারা বেকার হয়ে গেছেন। নদী খনন করলে হয়তো তিস্তা তার পুরোনো নাব্য ফিরে পাবে। পানি না থাকায় বালুচরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে নৌকা।

শীতের মাঝামাঝি সময়ে এসে তিস্তা নদীতে নাব্য সংকট তীব্র হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও পলি জমে ভরে গেছে নদী। খনন, সংস্কার, শাসন ও সংরক্ষণ না করায় এক সময়ের খরস্রোতা নদীটি এখন অনেক স্থানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নাব্য সংকটে ২০ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে বেকার হয়ে গেছেন হাজারও নৌ শ্রমিক ও জেলে।

উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, শান্তিরাম, কঞ্চিবাড়ি, চণ্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী। ৫৩ বছরেও এ এলাকায় খনন করা হয়নি। এতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অনেক স্থানে এখন ফসলের আবাদ হচ্ছে। গতিপথ পরিবর্তন করে অসংখ্য শাখা নদীতে বিভক্ত হয়েছে। বছরে সর্বোচ্চ ছয় মাস মূল নদীতে নৌকা চলাচল করে। বাকি সময়  হেঁটে চলাচল করতে হয় মানুষের।

বেলকা চরের জেলে হরিদাস বলছিলেন, তিস্তা নদীতে এখন আর পানি থাকে না। পলি জমে নদী ভরে গেছে। এতে মাছ ধরারও সুযোগ নেই। ১৫ বছর ধরে জেলেরা সেভাবে মাছ ধরতে পারছেন না। এ জন্য অনেকে চাষের মাছের ব্যবসা করছেন। আবার অনেকে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময় উপজেলার পাঁচপীর, বেলকা, মীরগঞ্জ ও তারাপুর খেয়াঘাট থেকে নৌযান চলাচল করত। পীরগাছা, কাউনিয়া, উলিপুর, কুড়িগ্রাম, কাশিমবাজার, চিলমারী, রৌমারী, মোল্লারচর, ভূরুঙ্গামারী, দেওয়ানগঞ্জ, কামারজানি, গাইবান্ধা, সাঘাটা, ফুলছড়ি, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, বালাসীঘাট, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ রুটে এসব চলত।  নাব্য সংকটে সব রুট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে নৌ শ্রমিক ও জেলেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে জীবিকার জন্য অন্য পথ বেছে নিয়েছেন।

জেলা ও উপজেলা শহর থেকে কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন যানবাহনে জেলা ও উপজেলা শহর থেকে পণ্য এনে ব্যবসা করা কষ্টকর হয়ে গেছে বলে জানান বাদামের চরের ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, ঘোড়ার গাড়ি ও হাঁটা ছাড়া অন্য উপায়ে চরে চলাচলের উপায় নেই। অথচ ১৫ বছর আগেও নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়া করা যেত। 

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদী এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। উজানের পলি জমে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য শাখা নদীতে রূপ নিয়েছে। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২০ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সে কারণে চরের মানুষ চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। নদী খনন (ড্রেজিং) এখন সময়ের দাবি মত তাঁর।

উজানের ঢলে পলি জমে তিস্তা নদী ভরাট হয়ে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর বন্যার সময় ভাঙনে বসতবাড়ি ও হাজারো একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। খনন করে মূল স্রোতে ফিরে আনলে উপজেলা ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। 
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, নদী খনন ও সংরক্ষণ এবং স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখানে তাদের কোনো হাত নেই।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের