শীত মৌসুমে নানা সবজির মধ্যে ফুলকপির চাহিদা সাধারণত বেশি থাকে। সেই ফুলকপি চাষ করে এখন বিপাকে নওগাঁর কৃষকরা। সবজিটির বাম্পার ফলনেও তাঁদের মুখে একবিন্দু হাসি নেই। চোখের লোনা জলে ভেসে তাঁরা কপাল চাপড়িয়ে হা-হুতাশ করছেন। কারণ পাইকারি প্রতি পিস ফুলকপি সর্বনিম্ন ৫০ পয়সা আর সর্বোচ্চ দুই টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা তাঁদের উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম।
গতকাল বুধবার সকালে নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কসংলগ্ন ডাক্তারের মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই কৃষকরা চাষ করা ফুলকপি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু ফুলকপি বিক্রি করতে এসেই পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। প্রতি পিস ফুলকপির দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ৫০ পয়সা। আবার অপেক্ষা করেও ক্রেতার দেখা মিলছে না।
কৃষকরা বলছেন, গত বছর ফুলকপির ভালো দাম পেয়েছেন তাঁরা। সে বিষয়টি মাথায় রেখে এ বছরও আবাদ করেছেন। তবে ফুলকপির দাম যা দাঁড়িয়েছে তাতে লাভ তো দূরে থাক, আসলও উঠে আসছে না।
সবজির দামে ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও খরচের টাকা তুলতে না পেরে পথে বসতে চলেছেন কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতে আগাম জাতীয় এ সবজির উৎপাদন কম থাকায় দাম ছিল বেশ চড়া। বর্তমানে উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে এমন ধস নেমেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
ফুলকপি বিক্রি করতে আসা কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করতে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন ফুলকপি দু-এক টাকা পিস দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তা-ও ফুলকপি কেনার ক্রেতা নেই। এক বিঘা জমির ফুলকপি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। তাহলে আমরা কী করে চলব? ধারদেনা করে ফুলকপি চাষ করেছি, সেই টাকাই তো পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।’
মোস্তফা নামের আরেক ফুলকপি বিক্রেতা বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। প্রতিটি ফুলকপিতে ছয় থেকে আট টাকা খরচ হয়েছে। এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সা থেকে এক-দেড় টাকা দরে। বিক্রি করে ভ্যান খরচের টাকাও উঠবে না। মনে হচ্ছে, এখনো জমিতে যে ফুলকপি আছে সেগুলো গরুকে দিয়ে খাওয়াই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে, যা থেকে প্রায় ছয় হাজার ২০০ টন ফুলকপি উৎপন্ন হতে পারে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম