পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার মধ্যবর্তী বাগদা ব্লকের রণঘাট গ্রাম সংলগ্ন কোদালিয়া নদী বরাবর ৫ কিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার করে নিজেদের দখলে নিয়েছে- সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিজিবি) এমন দাবি করেছে। তবে এ বিষয়ে পাল্টা বক্তব্য দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তারা বলেছে, খবরটি ‘ভিত্তিহীন’।
বর্তমানে ঠিক কী পরিস্থিতি সীমান্তের ওই অংশে?
বুধবার বিবাদপূর্ণ ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক। তবে এলাকাজুড়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সীমান্ত ও নদী বরাবর এলাকা নিজেদের দাবি করে নিয়মিত মাইকিং করছে বিজিবি। বিজিবির দাবি, রণঘাট এলাকায় শুধু কোদালিয়া নদী নয়, নদীর পরেও অন্তত ৪০০ মিটার এলাকা বাংলাদেশের ভূখণ্ড। তাই এই এলাকা থেকে ভারতীয়দের সরে যাওয়ার আবেদন জানাচ্ছে তারা। একইসঙ্গে নদী ও নদী সংলগ্ন একাধিক পুকুর যেহেতু বাংলাদেশের তাই ভারতীয় নাগরিকদের নদীতে, পুকুরে গোসল করা কিংবা মাছ ধরার ক্ষেত্রেও নিষেধ করে মাইকিং করছে বিজিবি।
স্থানীয় বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, সীমান্তের রণঘাট এলাকার এই অংশে কাঁটাতার নেই। সীমান্তের ওপারেই নদী। তার দাবি, বিগত ৫০ বছর ধরে এই এলাকায় কোদালিয়া নদী তারা ব্যবহার করে আসছেন। তাদের ধারণা ছিল সীমান্ত নদীর মাধ্যমেই বিভক্ত। তিনি জানান, নদীর পাড়ে যে সীমানা পিলার ছিল সেই পিলার সম্প্রতি বিজিবি তুলে নিয়েছে।
ভারতীয় কৃষক সৌমিত্র সাতরা বলেন, ভারতের যে অংশ বিজিবি বাংলাদেশের ভূখণ্ড বলে দাবি করছে সেই অংশে অন্তত ৭০০-৮০০ বসতবাড়ি রয়েছে। সীমান্তের এই অংশে এবং সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় ভারতের চাষবাসের জমি রয়েছে। বিজিবির এমন ঘোষণা এলাকার মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে মাইকিংয়ের মধ্যেই বিজিবির ভূখণ্ড দাবির বিষয়টা সীমাবদ্ধ।
এদিকে নদী বা নদীর সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় বাড়তি বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভারতের দখলে থাকা কোদালিয়া নদী বরাবর ৫ কিলোমিটার এলাকা সম্প্রতি বিজিবি পুনরুদ্ধার করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে কোদলা নদীর বাংলাদেশ সীমান্তের ওই অংশ ভারতের দখলে। গত সোমবার সন্ধ্যায় ৫৮ বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, কোদালিয়া নদী বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয়ে মহেশপুরের মাটিলা এলাকায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চিহ্নিত করেছে। ১৯৬১ সালে প্রণীত বাংলাদেশ-ভারত (স্টিপ ম্যাপ সিট নম্বর-৫১) মানচিত্র অনুসারে কোদালিয়া নদীর উল্লিখিত ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদী সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখার অভ্যন্তরে অবস্থিত।
বিজ্ঞপ্তি থেকে আরও জানা যায়, সম্প্রতি কোদালিয়া নদীর প্রকৃত মালিকানা-সংক্রান্ত এই বিষয়টি ৫৮ বিজিবির নজরে আসে। এরপর বিজিবি প্রথমে বিভিন্ন নথিপত্র স্থানীয় প্রশাসন ও মানচিত্র থেকে নদীটির প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে বিএসএফের অবৈধ আধিপত্য বিস্তারের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পরে ৫৮ বিজিবির সদস্যরা সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কোদালিয়া নদী নিজেদের আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমানে বিজিবি সদস্যরা প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার জন্য যন্ত্রচালিত বোট এবং নদীর পাড়ে দ্রুত টহলের জন্য অল টেরেইন ভেহিকেল (এটিভি) বরাদ্দ করা হয়েছে।
পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করে বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার বলেছে, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের একটি অংশে প্রকাশিত এই ধরনের প্রতিবেদনে ‘সত্য ও বিশ্বাসযোগ্যতার’ অভাব রয়েছে। প্রতিবেদনটিকে ‘ভিত্তিহীন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে উল্লেখ করেছে বিএসএফ।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দাবি, ভারতীয় ভূখণ্ডের এক ইঞ্চিও প্রতিপক্ষের দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয়নি বা হবেও না। বিএসএফ ও বিজিবি উভয়ই ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নির্দেশিকা, ১৯৭৫’ অনুসারে তাদের নিজ নিজ এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছে, যাতে সীমান্তের অখণ্ডতা নিশ্চিত করা যায়। আন্তর্জাতিক সীমানা ও বিএসএফের ডিউটি প্যাটার্ন কয়েক দশক ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম