বৃহস্পতিবার,

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪,

১২ পৌষ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪,

১২ পৌষ ১৪৩১

Radio Today News

জাহাজে ৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা, যে ধারণা করছে পুলিশ

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

Google News
জাহাজে ৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা, যে ধারণা করছে পুলিশ

চাঁদপুরের মেঘনা নদীর হাইমচর উপজেলার ইশানবালা এলাকায় এমভি আল-বাখেরা নামে সারবাহী একটি জাহাজে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ চালিয়ে ৭ জনকে গলা কেটে ও মাথা থেঁতলে হত্যা করেছে। এর বাইরে গুরুতর আহত একজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এর আগে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা তিনটার দিকে চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা খালের মুখ এলাকায় মেঘনা নদীর একটি ডুবোচরে নোঙর করে থাকা জাহাজটি থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রক্তাক্ত দেহগুলো জাহাজের কর্মীদের ঘুমানোর কক্ষে কক্ষে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। কারও কারও মাথায় গভীর ক্ষত দেখা গেছে। কারও কারও ছিল গলা কাটা। শরীরের অন্যান্য স্থানেও আঘাত ছিল। 

নিহত ব্যক্তিরা জাহাজটির কর্মী। তাদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের গোলাম কিবরিয়া (৬৫), চালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল ও লস্কর সবুজ শেখ (২৬)। কিবরিয়া ও সবুজ মামা–ভাগনে। সালাউদ্দিন ও আমিনুলের বাড়ি নড়াইল বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুরুতর আহত খালাসি জুয়েল ফরিদপুর সদর উপজেলার বকারটিলা গ্রামের সেকান্দার খালাসির ছেলে।

এদিকে সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় জানান, প্রাথমিক তদন্তে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। কারণ সেখানে দুটি মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

জাহাজটির মালিক দিপলু রানা গণমাধ্যমে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে রওনা হওয়ার পর রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে জাহাজটির মাস্টারের সঙ্গে তার সবশেষ কথা হয়। তখন মাস্টার জানিয়েছিলেন, মেঘনা নদীতে তারা জাহাজের বহরের মধ্যেই ছিলেন। তবে সকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ সাড়া দেননি। 
তিনি বলেন, ‘বারবার যোগাযোগ করে কাউকে না পেয়ে আমাদের আরেকটি জাহাজের (মুগনি-৩) নাবিকদের বিষয়টি জানাই। ওই জাহাজ এমভি আল–বাখেরার কাছাকাছি ছিল। তারা আল-বাখেরার কাছে যাওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পারেন।’

মুগনি-৩ নামের জাহাজটি চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। জাহাজটির চালক মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া গণমাধ্যমে বলেন, তিনি মালিকের ফোন পেয়ে বেলা একটার দিকে এমভি আল-বাখেরার কাছাকাছি যান। সেখানে গিয়ে আল–বাখেরায় থাকা তার ভাতিজা জুয়েলকে ফোন করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে মালিককে ফোন করেন তিনি। তখন মালিক জাহাজটিতে গিয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য বলেন।

বাচ্চু মিয়া আরও বলেন, এমভি আল-বাখেরায় গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পাঁচজনকে পড়ে থাকতে দেখেন আমাদের সুকানি রবিউল। তারা জীবিত ছিলেন না। এ ছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজন জাহাজে পড়ে ছিলেন। তারা তখন ৯৯৯–এ ফোন করেন। এরপর নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

নৌ পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে চাঁদপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। 

হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার আনিসুর রহমান জানান, হাসপাতালে নেয়ার পর দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জুয়েল নামের একজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম ইকবাল বলেন, আমরা আহত জুয়েলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি কিছু বলতে পারেননি। একটি কাগজে শুধু তার নাম আর একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে গেছে।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঠানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়েছে।

চার সদস্যের তদন্ত কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক এবং যুগ্ম সচিবকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

কমিটিকে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দায়দায়িত্ব নিরূপণ, অনুরূপ নৌ দুর্ঘটনা রোধে ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণ করে সুস্পষ্ট সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া জাহাজে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড ও আহতের ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয় গভীর শোক প্রকাশ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের