ঋতুচক্রে এখন হেমন্ত। সাঁঝ-প্রভাতে জনপদগুলো ঢেকে নিচ্ছে কুয়াশার চাদরে। ঘাসের ডগায়, বৃক্ষ পল্লবে মুক্তোর মতো শিশিরের বিন্দু টলমল করছে। ভোরের সোনা রোদ তাপ ছড়াতে না ছড়াতেই দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। রাত হচ্ছে দীর্ঘ। ইতিমধ্যে দেশের উত্তর জনপদে জেঁকে বসেছে শীত।
পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নওগাঁ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, সৈয়দপুর, লালমনিরহাটসহ উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের দাপটে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কনকনে শীতের দাপট, কুয়াশায় জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। গতকাল নওগাঁয় তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। যা এই মৌসুমে সর্বনিম্ন।
বাড়তে শুরু করেছে শীতের প্রকোপ। যতই দিন যাচ্ছে ততই নওগাঁর তাপমাত্রা কমছে। গত দুই দিন নওগাঁর তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রিতে অবস্থান করলেও শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সেই তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। যা এই মৌসুমে সর্বনিম্ন। সকাল ৬টায় দিনাজপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছরে এটি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গত কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হচ্ছে হিমেল বাতাস। আর তার সঙ্গে যোগ দেয় ঘন কুয়াশা। রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, এ বছরের শীত মৌসুমে তিনটি হাড় কাঁপানো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে দেশের ওপর দিয়ে। এতে তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. ছাদেকুল আলম জানিয়েছেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মোট ১৩টি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০টি মৃদু (০৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (০৬-০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
তবে উত্তরপশ্চিমাঞ্চল, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহে (০৪-০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রূপ নিতে পারে। এদিকে চলতি ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১২টি শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়বে দেশ। এ সময়ের শেষ দিকে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ও হতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এমন অবস্থায় আগামী কয়েক দিনে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এছাড়া আগামী তিন দিন অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আর এই সময়ের মধ্যে শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্য জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। আজ রবিবার ও কাল সোমবার সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা পর্যালোচনায় রাত ও দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
নওগাঁয় দিনেও আলো জ্বেলে চলছে যান: নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, উত্তরের জেলা নওগাঁয় গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলো আলো জ্বেলে চলতে হচ্ছে। বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে এখানে। সকালে নওগাঁয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনাজপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত: দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য পশুপাখিরাও বিপাকে পড়েছে। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন জানান, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৩ শতাংশ। শীতের তীব্রতা আরও অনেক বেশি হবে। সেই সঙ্গে বয়ে যেতে পারে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম