নোয়াখালীর চাটখিলে রাতে বসতঘরে ঢুকে শিশু-সন্তানদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামি মজিবুল রহমান শরীফকে (৩২) মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবদুর রহিম এ রায় দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হারুনুর রশিদ লাভলু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী। তাঁর ভাষ্য, ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পরও আলোচিত সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা শরীফ কী করে মামলা থেকে রক্ষা পেল।
শরীফ চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক। তার বিরুদ্ধে চাটখিল ও সোনাইমুড়ী থানায় বিভিন্ন অভিযোগে ১১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং বাকিগুলো অস্ত্র, মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির মামলা।
চাটখিল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের একাংশের আহ্বায়ক মোহাম্মদ উল্যাহর অনুসারী শরীফ। মোহাম্মদ উল্যাহ সম্প্রতি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
মামলা থেকে জানা যায়, চাটখিলের নোয়াখলা ইউনিয়নের এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী (২৯) বাড়িতে তাঁর দুই শিশু সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর ভোরে নোয়াখলা গ্রামের রফিকুল ইসলাম খোকনের ছেলে মজিবুল রহমান শরীফ কৌশলে প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ঢোকে। সে দুই শিশু সন্তানের গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় গৃহবধূ বাদী হয়ে ২১ অক্টোবর চাটখিল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় বাদীর পক্ষে ১৪ জন সাক্ষীর এবং বিবাদী পক্ষের চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মামলার বাদী প্রবাসীর স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার দুই শিশু সন্তান ও আমাকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নির্যাতন করেছে শরীফ। ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পরও আলোচিত সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা শরীফ কী করে মামলা থেকে রক্ষা পেল? আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘শরীফ জেল থেকে বের হলে আমার বড় ধরনের ক্ষতি করবে। আমি নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েছি। আমি সরকারের কাছে আমার নিরাপত্তা দাবি করছি।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ লাভলু বলেন, এই রায়ে নির্যাতিত নারী ন্যায়বিচার পাননি। বাদীর সঙ্গে আলোচনা করে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন হারুনুর রশিদ লভলু। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সালাহ উদ্দিন কামরান।