ছবি: রেডিও টুডে
অবশেষে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে বাংলাবাজারের বিকল্প মাঝিরকান্দি ফেরি ঘাট চালু হচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন ঘাটের পন্টুন স্থাপন ছাড়াও সংযোগ সড়কও তৈরি সম্পন্ন। সংযোগ সড়ক তৈরিও শেষ। পদ্মা সেতু এড়িয়ে সোজা পথে মাঝিরকান্দি ঘাট ফেরি চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
আগামীকাল শুক্রবার থেকে চালু হতে পারে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ঘাট। তবে বিআইডব্লিউটিসি বলছে, ফেরি চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। আটদিন বন্ধ থাকার পর দেশের গুরুত্বপূর্ণ ফেরি সার্ভিস সীমিত আকারে চালু হচ্ছে বলে আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এই ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নতুন ঘাটে দূরত্ব কমবে ৩ কিলোমিটার। নতুন ফেরি ঘাট চালু হওয়ার খবরে যাত্রী ও স্থানীয়রা খুশি।
প্রবল স্রোতে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ফেরি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে গেল আট দিন ধরে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিসি। এতে নানা দুর্ভোগে পড়েছেন ঘাট ব্যবহারকারীরা। ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা এই নৌরুটে লঞ্চ-ট্রলার, ছোট নৌযানসহ সব নৌযানে চলাচল করলেও বন্ধ রয়েছে শুধু ফেরি। এতে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মাঝিরকান্দি থেকে সড়ক পথে পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টে দূরত্ব কমবে ৫ কিলোমিটার। দক্ষিণাঞ্চল থেকে শিমুলিয়াগামী যানবাহন এই সড়কে মাঝিরকান্দি ঘাট ব্যবহার করবে। আর শিমুলিয়াঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহনগুলো মাঝিরকান্দি ঘাটে নেমে বিকল্প পথ কাজীরহাট হয়ে পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাবে। মাঝিরকান্দি থেকে এই ঘুরপথে জাজিরা পয়েন্টের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রাস্তা সরু হওয়ার কারণে ওয়ানওয়ে অর্থাৎ দুই দিকের পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজারের রুটের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। আর শিমুলিয়া থেকে নতুন এই মাঝিরকান্দি ঘাটের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার।
বিআইডব্লিউটিএ’র শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন জানান, জরুরি পরিস্থিতিতে ঘাট তৈরি করা হচ্ছে। আপাততঃ মিডিয়াম ফেরি চলাচল করতে পারবে। মাঝিরকান্দি ঘাটের মূল চ্যালেঞ্জ পর্যাপ্ত রাস্তার অভাব। মাঝিরকান্দি ঘাট থেকে পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকায় পুরোদমে ফেরি সার্ভিস চালু করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, মাঝিরকান্দি ঘাট ব্যবহার করে আপদকালীন সীমিত ফেরি সার্ভিস চালুর ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় জরুরি ভার্চুয়াল সভা ডাকা হয়েছে। এই সভায় শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি অংশ নিবেন। এই সভা থেকে ঘাট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
গত ১৮ আগস্ট থেকে পদ্মায় প্রবল স্রোত দাবি করে ফেরি চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি। দেশের প্রধান এই ফেরি সার্ভিস গত ৮ দিন ধরে বন্ধ থাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। তবে শিমুলিয়া-বাংলাবাজারের পরিবর্তে শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দির ঘাট চালু হওয়ায় মাঝিরকান্দির স্থানীয়রা খুশি। আর বিষাদে রূপ নিয়েছে বাংলাবাজার এলাকার লোকজনের।
পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজের জন্য কাঁঠালবাড়িঘাট ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সরিয়ে নেয়া হয় বাংলাবাজার ঘাটে। গেল ১৫ নভেম্বর বাংলাবাজার ঘাট উদ্বোধন হয়। পরিকল্পনার অভাবের কারণে এতবড় গচ্চা যাচ্ছে। অথচ কাঁঠালবাড়ি ঘাট সরানোর প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় এটি মাঝিরকান্দিতে সরিয়ে নিলে এই সঙ্কট এড়িয়ে চলা সম্ভব ছড়াও আর্থিক সাশ্রয় করা সম্ভব ছিল।
মাঝির কান্দিতে ঘাট নিয়ে আসায় ফেরি পথের দূরত্ব কমবে ৩ কিলোমিটার। এতে সময় এবং জ্বালানি সাশ্রয় হবে। তবে সড়ক পথের দূরত্ব বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঘাটের প্রশস্ত সড়ক তৈরি হয়ে গেলে সব ধরণের ফেরি চলাচল করবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা।
গত ২৩ জুলাই ফেরি শাহজালাল পদ্মা সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা দেয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বাংলাবাজারঘাট মাঝিরকান্দি বা শিমুলিয়াঘাট মাওয়ায় স্থানান্তরের সুপারিশ করে। ২৫ জুলাই পেশ করা এই সুপারিশ যথা সময়ে কার্যকর শুরু করলেও আটদিন ধরে ফেরি বন্ধ রাখতে হতো না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এখনও দায়িত্বশীলদের গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
রেডিওটুডে নিউজ/এসআই/এসবি/ইকে