লালমনিরহাট, ১২মে, ২০২২: বিষফোঁড়ার মতো সারাদেশে ছেয়ে গেছে ইটভাটা। চাষের জমি থেকে সবুজ বন, আর সবুজ বন থেকে খোলা হাওয়া; ইটভাটার বিষ ছেয়ে গেছেসব জায়গায়। লাভের আশায় গড়ে তোলা হচ্ছে একের পর এক ভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন না নিয়েই চলছে এসব কাজ।
ইটভাটায় ছেয়ে গেছে দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। সেখানে বর্তমানে ৫১টি ইটভাটা চলছে। আর পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদন দিয়েছেমাত্র ১২টিকে। অর্থাৎ ৩৯টি ইটভাটাই চলছে অবৈধভাবে।
মাটির উপরিভাগের ৫ থেকে ১০ ইঞ্চিকে বলা হয় টপসয়েল। এই টপসয়েলেই মাটির সব গুণাগুণ থাকে। জৈব পদার্থ ও অনুজীবের ঘনত্ব সবচেয়েবেশি থাকে মাটির এই অংশে। আর মাটির এই অংশেই ফসল উৎপাদিত হয়। শঙ্কার বিষয় হলো-হুড়মুড় করে বেড়ে ওঠা ইটভাটার জন্যেও নিয়েযাওয়া হয় মাটির এই অংশটিই।
লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপরিভাগের এই মাটি ক্রমাগত নিয়ে যাবার কারণে ফসলের উৎপাদন কমেগেছে। অন্যদিকে, চাষের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। কেননা, মাটি নিয়ে যাবার কারণে অসমতল হয়ে পড়ছে পাশাপাশি থাকাচাষের জমি। ফলে, সেচের পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ইদ্রিস আলী জানান, প্রথমদিকে অনেকে টাকার লোভে মাটি বিক্রি করে দিত। কিন্তু এখন ফসলের জন্যমাটি বিক্রি করতে না চাইলেও জোর করে নিয়ে যায় ভাটামালিকরা। ক্ষমতাধর এই ভাটামালিকদের কাছে কৃষকরা অধিকাংশ সময়ই অসহায়।এদিকে, ভাটায় ইট পোড়ানোর জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের কাঠ। একেকটি ইটভাটায় এত পরিমাণ কাঠের প্রয়োজন হয়, যার ফলে উজাড়েরপথে এ অঞ্চলের বনাঞ্চল। অনেক সময় কাঠের বিপরীতে গাড়ির টায়ার, গার্মেন্টেসের ঝুটসহ নানা রাসায়নিক পদার্থও পোড়ানো হয়। ফলেকালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশও।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগ নিয়ে জানতে রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক, উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকেরসঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে তারা কেউই এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকারের একটি অঙ্গীকার ছিল২০২০ সালের মধ্যে পোড়া ইট শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, কিন্তু সেটি সরকার পারেনি। ইটভাটায় কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর জমি ব্যবহারকরা হয়। ফলে এসব ইটভাটার কারণে কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে। আবার ইটভাটার ছাই-ভস্ম ও ধোঁয়া আশেপাশের ফসল উৎপাদনের ক্ষতিকরছে। তাছাড়া মানুষ হাঁপানি, চুলকানি কিংবা চোখ জ্বালাপোড়াসহ নানা সমস্যায় পড়ছে ইট পোড়ানোর কারণে। এসব কারণে প্রচলিতইটভাটায় ইট তৈরির পরিবর্তে নির্মাণকাজে ব্লক ব্যবহারের উৎসাহিত করতে হবে।’