দেশে বছরে ৮০ লাখ টন ফিড উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি ফিডে যদি পাঁচ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়, ৮০ লাখ টন ফিডে কম্পানিগুলো বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। এ ছাড়া দেশে বছরে প্রায় ১০৪ কোটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদিত হয়। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা অতিরিক্ত নেয়, তবে কম্পানিগুলো খামারিদের কাছ থেকে বছরে প্রায় দুই হাজার ৮০ কোটি টাকা মুনাফা করছে। এইভাবে করপোরেট কম্পানিগুলো ফিড ও মুরগির বাচ্চায় বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।
শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) উদ্দোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। কম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটের হিসাব অনুসারে এই তথ্য পাওয়া যায়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার। উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি বাপ্পি কুমার দে ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) উদ্যোগে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আগামী ১২ জানুয়ারি রবিবার থেকে ঢাকা শহরের ২০ পয়েন্টে এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১০০ পয়েন্টে সীমিত লাভে ডিম, ফ্রোজেন মুরগি এবং অন্য কৃষিজাতপণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করবে। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এত বড় পরিমাণ অতিরিক্ত মুনাফা করার পরও কম্পানিগুলো সরকারকে তাদের মনগড়া ক্ষতির গল্প শোনাচ্ছে।
এই ধরনের অবস্থা শিল্পকে আরো বিভ্রান্তিকর এবং শঙ্কিত করে তুলবে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, যা দেশের খামারিদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্ষুদ্র খামারিদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা যদি না নেওয়া হয়, তবে করপোরেট গ্রুপ বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।
ক্ষুদ্র খামারিদের স্বার্থ সুরক্ষায় ১০ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পোলট্রি খাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে করপোরেট কম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা রোধ করতে হবে।
বর্তমানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে করপোরেট কম্পানিগুলো প্রান্তিক খামারিদের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। এই সিস্টেমটি বন্ধ করা জরুরি। ক্ষুদ্র খামারিদের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করতে ঋণ ও ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
যখন ডিম বা মুরগির মূল্যবৃদ্ধি পায়, তখন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপ দেখা যায়। কিন্তু ফিড বা মুরগির বাচ্চার দাম বাড়লে কেন সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না? কেন তার প্রতিক্রিয়া থাকে না? ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়লে এর সরাসরি প্রভাব প্রান্তিক খামারির ওপর পড়ে। তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় না এবং তাদের উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকে। বাজার থেকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার লক্ষ্যে ভোক্তা এবং উৎপাদকের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার ঘোষিত ডিম, মুরগির ন্যায্য দাম বাস্তবায়ন করতে হবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম